Is Forex Trading Halal or Haram-ফরেক্স ট্রেডিং কি হালাল
আল্লাহ ব্যবসা কে হালাল করেছেন আর সুদ কে করেছেন হারাম। ইসলামীক মূল্যবোধ থেকে আমরা সাধারনত সুদ ভিত্তিক যে কোন ব্যবসা বা কারবার কে অবৈধ হিসাবে মূল্যায়ন করে থাকি।কারন মহাগ্রন্থ আল কোরান ও হাদিসে নবওয়ীতে সুদের বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং সে দৃষ্টিকোন থেকে আমরা ব্যাক্তিগত জীবনে সুদী যে কোন কারবারে জড়িত হতে পারিনা, এবং কর্মজীবনে এমন যে কোন পেশা বা কারবার থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে বর্তমান বিশ্ব বানিজ্য সম্পূর্ন সুদ ভিত্তিক এবং মুসলিম বিশ্বও এই সমস্যায় জর্জড়িত। অনেক টা বলতে গেলে সুদ ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার কাছে মুসলিম বিশ্ব জিম্মি। ফলে সুদের ছুয়াঁ থেকে মুক্ত থাকার ইচ্ছা থাকলেও অনেকাংশে তা সম্ভব হয়ে উঠছেনা। ফলে আমাদের মাঝে যারা ইসলামীক মূল্যবোধে অবিচল তারা মূলত বিভিন্ন উপায়ে সুদ কে এড়িয়ে চলছি।
ফরেক্স মার্কেট আন্তর্জাতিক মূদ্রা বাজার হওয়াতে এখানেও সুদ প্রবেশ করেছে। এ কারনে বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামীক স্কলারগন প্রাথমীক পর্যায়ে এ বিজনেস কে ইসলামী শরীয়াহ পরিপন্থী হওয়ার ব্যপারে মত প্রকাশ করলেও অনেক ইসলামীক স্কলারগন এর এক টি সংশোধনী এনেছেন এবং সংশোধনীতে তারা সুদ,লিভারেজ,প্রতারনা,মুদ্রার অস্তিত্ব,জুয়া সাদৃশ্য এ বিষয় গুলোকে সংশোধনের ভিত্তিতে বৈধতা দিয়েছেন। তবে অনেক স্কলার সুদ ছাড়া বাকি বিষয় গুলো কে আমলে নেননি। তাই তারা এর অনুমোদন দিয়েছেন। তবে যে কয়টি বিষয়ের কারনে অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন ইসলামীক স্কলারগন মত প্রকাশ করেছেন সে সব বিষয়ে তাদের সাথে আমার মত পার্থক্য রয়েছে। কারন অনেকাংশে তারা ব্যবসাটির সঠিক সিস্টেম বুঝতে ব্যার্থ হয়েছেন। ফলে তাদের কিছু প্রশ্নের সমাধান আমার ব্যাক্তিগত গবেষনা ও পর্যবেক্ষনের ভিত্তিতে উল্লেখ করছি। উল্লেখ্য যে ফরেক্স ট্রেডিং শরীয়াহ সম্মত হওয়ার বিষয়ে নিম্মোক্ত যে গবেষনাটি উপস্থাপন করা হয়েছে তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত। যদি উক্ত গবেষনার কোন পয়েন্টের উপর আপনার আপত্তি থাকে তবে আপনি বিজ্ঞ কোন ইসলামিক স্কলারের সাহায্য নিতে পারেন। যিনি আধুনিক অর্থব্যবস্থার উপর পড়া-শোনা করেছেন।
Islamic Trading Rules vs Forex Trading Market
- 01| ইসলামিক নীতিঃ দুই পক্ষ ( ক্রেতা/বিক্রেতা) বিদ্যমান থাকা।
- ফরেক্স মার্কেটঃ দুই পক্ষ বিদ্যমান ।(এক) ব্রোকারপক্ষ (দ্বিতীয়) লিকিউডিটি প্রোভাইডার পক্ষ।
- 02| ইসলামিক নীতিঃ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত বস্তুটি বিক্রয় যোগ্য হওয়া এবং বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকা।
- ফরেক্স মার্কেটঃ বিক্রয় যোগ্য বস্তু যেমন মূদ্রা । এর ফিজিক্যাল অস্তিত্ব বিদ্যমান
- 03| ইসলমিক নীতিঃ ক্রয় বিক্রয়ে হারাম বস্তু না থাকা। যেমন শুকর,মদ ইত্যাদি।
- ফরেক্স মার্কেটঃ এখানে এমন কোন হারাম বস্তুর অস্তিত্ব বিদ্যমান নেই। বিশেষ করে আমরা যারা মুদ্রা নিয়ে কাজ করছি তারা সম্পূর্ন রূপে এ ঝামেলা মুক্ত।
- 03| ইসলামিক নীতিঃ বস্তুর মূল্য নির্ধারিত হওয়া।
- ফরেক্স মার্কেটঃ প্রতিটি বিক্রয় যোগ্য বস্তুর মুল্য নির্ধারিত।যেমন মূদ্রার ক্ষেত্রে Exchange rate এবং শেয়ারের ক্ষেত্রে শেয়ার ভ্যালু।
- 04| ইসলামিক নীতিঃ বিক্রিত বস্তুর উপর ক্রেতার মালিকানা এবং মূল্যের উপর বিক্রেতার মালিকানা অর্জিত হওয়া।
- ফরেক্স মার্কেঃ একজন ফরেক্স ট্রেডারের বাই /সেল পজিশনটি ব্রোকার হাউজের মধ্যস্থতায় লিকিউডিটি প্রোভাইডার(LP)-র সাহায্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে কার্যকর হওয়ার পর ট্রেডারের ক্রয়-বিক্রয় ভলিয়ম/পরিমান/লট অনুপাতে LP ট্রেডারের পরবর্তী কমান্ড পর্যন্ত মুদ্রাগুলো তার সার্ভারে সংরক্ষন করে থাকে।ট্রেডার পক্ষ যতদিন চায় পজিশন টি ধরে রাখার মাধ্যমে ক্রয়কৃত মুদ্রা সংরক্ষন করতে পারবে
- 05| ইসলামিক নীতিঃ লেন-দেন দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া।
- ফরেক্স মার্কেটঃ এটি সর্ম্পূন্য স্পট ট্রেডিং মার্কেট।যেখানে প্রতিটি ট্রেড/লেনদেন কার্যকর হয় চলমান বাজার মূল্যের ভিত্তিতে এবং তা কার্যকরে এক সেকেন্ডেরও কম সময় প্রয়োজন হয়।
- 06| ইসলামিক নীতিঃ লেন-দেন সম্পূর্ন সুদ মুক্ত হওয়া।
- ফরেক্স মার্কেটঃ ফরেক্স মার্কেটে ইসলামিক একাউন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পূর্ন সুদ মুক্ত লেনদেনের সুযোগ রয়েছে।
- 07| ইসলামিক নীতিঃ সমজাতীয় বস্তু কম-বেশিতে বিক্রয় না হওয়া।
- ফরেক্স মার্কেটঃ ফরেক্স মার্কেটে একটি দেশের মূদ্রা অন্য দেশের মূদ্রার সাথে বিনিময় মূল্যের ভিত্তিতে এক্সচেঞ্জ হয়ে থাকে।সমজাতীয় কোন মূদ্রা বাই / সেলিং হয়না।
- 08| ইসলামিক নীতিঃ লেনদেন সম্পূর্ন প্রতারনার ঝুঁকি বা আশংকা মুক্ত হওয়া।
- ফরেক্স মার্কেটঃ সম্পূর্ন সিন্ডিকেট মুক্ত ও একেবারেই সচ্ছ। যা পরিচালিত হয় গ্লোবাল সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলো দ্বারা।
- 09| ইসলামিক নীতিঃ ব্যবসাতে লাভ/লস বিদ্যমান থাকা।
- ফরেক্স মার্কেটঃ ফরেক্স মার্কেটে দুটিই বিদ্যমান আছে।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা এটা প্রমানিত হয় যে, ইসলামীক অর্থনীতি অনুযায়ী একটি ব্যবসা বৈধ হওয়ার যে সব কারন বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন তা ফরেক্স মার্কেটে বিদ্যমান রয়েছে। অতএব ফরেক্স মার্কেট কে অবৈধ ব্যবসা বলার কোন অবকাশ নেই।(আল্লাহ ভাল জানেন।আল্লাহ শ্রেষ্ট জ্ঞানী)
ফরেক্স ট্রেডিং ও প্রচলিত শেয়ার বাজার। একটি পর্যালোচনা
ফরেক্স ট্রেডিং ও প্রচলিত শেয়ার ব্যবসার বৈধতা বিষয়ে আমার একান্ত পর্যালোচনাটি দুটি পয়েন্টে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। আশা করি আমার ব্যাক্তিগত গবেষনা টি উপলব্ধির ক্ষেত্রে আলোচনাটি সহায়ক হবে। চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা মূল আলোচনা শুরু করি।
Point:-01 ফরেক্স মার্কেটের মৌলিক কারবার
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মূল কারবার টি সকলের কাছে স্পষ্ট নয়।খুব কম সংখ্যক মানুষ ফরেক্স বিষয়ে স্বচ্ছ ধারনা পোষন করেন। সাধারনত দেখা যায়, ফরেক্স ট্রেডিং কি, জানতে চাইলে যে যার মত করেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে থাকেন। ফলে আসল মার্কেট কন্সেপ্ট অনেকের পক্ষেই বুঝানো সম্ভব হয়না।যাইহোক স্বল্প পরিষরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক।ফরেক্স মার্কেটের মৌলিক কারবার।
যদি আপনি ইউরো, ডলার,রিয়াল ইত্যাদি যে কোন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় করেন তাহলে নিঃসন্দেহে তা বৈধ।এখানে শরীয়তের কোন বাধা নেই। কারন মুদ্রাগুলো সমজাতীয় নয়।ফলে আপনি ৮০ টাকায় ডলার কিনে ৮২ টাকায় বিক্রি করতে কোন আপত্তি নেই।কারন টাকা ও ডলার সমজাতীয় মুদ্রা নয়। যেমন দেরহাম এবং দিনার এক নয়।একই ভাবে আপনি ডলারের বিপরীতে টাকাও কিনতে পারেন।যেমন এক হাজার ডলার বিক্রি করে আপনি ক্রয় করলেন ৮৫ হাজার টাকা। পরবর্তিতে যখন দেখলেন যে ডলারের দাম পড়ে গেছে ৮০ টাকাতে। তখন যদি আপনি ঐ ৮৫ হাজার টাকা কে ডলারে রুপান্তর করেনেন তাহলে আপনি পাবেন ১০৬২.৫ ডলার। এবার মূলধন ১০০০ ডলার থেকে বাকি অংশ বাদ দিলে বরাবর $62.5 সেন্ট আপনার প্রফিট।এটাই হচ্ছে আধুনিক ফরেক্স ট্রেডিং পদ্ধতি। যেখানে বাই এন্ড সেল বলতে উক্ত দুটি প্রক্রিয়াকেই বুঝায়। অর্থাৎ একটি মুদ্রা জোড়ে সাপ্লাই এবং ডিমান্ড কে সামনে রেখেই মূলত এ ট্রেডিং হয়ে থাকে। সুতরাং মুল কারবারটি হালাল হওয়ার বিষয়ে দ্বিমত থাকার কোন প্রশ্নই আসেনা।
Point:-02 ফরেক্স কি হালাল-ইসলামীক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রচলিত শেয়ার ব্যবসা
ফরেক্স ও শেয়ার ব্যবসা দুটাই ট্রেডিং মার্কেট। উভয় মার্কেটের ট্রেডিং কার্যক্রম অনেকাংশে একই। বরং শেয়ার মার্কেটের তুলনায় ফরেক্স মার্কেট আরো বেশি সহজতর এবং ইসলামীক। কারন শেয়ার মার্কেট বৈধতা পাওয়ার জন্য যেসব রুলস দেয়া হয়েছে তা তুলনা মূলক ভাবে ফরেক্স মার্কেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারন উভয় মার্কেটের ট্রেডিং প্রক্রিয়া একই হলেও কিছু ভিন্নতা আছে। চলুন প্রচলিত শেয়ার ব্যবসাকে ইসলামীক স্কলারগন যেসব কারনে বৈধতা দিয়েছেন তা আলোচনা করা যাক।
স্টক মার্কেট থেকে শেয়ার কেনা-বেচা ৪টি শর্ত সাপেক্ষে বৈধ। যথা
- ১। কোম্পানীর মৌলিক কারবার হালাল হওয়া।
- ২। কোম্পানীর কিছু স্থায়ী সম্পত্তি থাকা।যদি সম্পূর্ন পুঁজি তরল হয় অর্থাৎ লিকুইড এসেট তবে তা হারাম।
- ৩। কোম্পানী সুদী লেনদেনে জড়িত থাকলে বাৎসরিক মিটিংয়ে সুদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। যদিও তা অগ্রাহ্য হয়।
- ৪। কোম্পানীর ইনকাম স্টেটমেন্ট থেকে সুদী ডিপোজিটের উপর অর্জিত মুনাফা সদকা করে দেয়া।ডিফারেন্স দুর করার জন্য লেনদেন করা যেখানে শেয়ার লেনদেন হয় না এমন ট্রেডিং হারাম। সুদ ভিত্তিক ডিবেঞ্চার কেনা-বেচা বৈধ নয়।
উপরোক্ত চারটি শর্ত সাপেক্ষে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় বৈধতা দিয়েছেন ইসলামীক স্কলারগন।কিন্তু ট্রেডিং মার্কেট হিসাবে যদি আপনি উক্ত শর্তগুলো ফরেক্স মার্কেটে বিবেচনা করেন তাহলে বিষয়টি কেমন হয় ?
- ১। মুদ্রা জোড়ে ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রথম শর্তটি প্রযোজ্য নই।
- ২। প্রতিটি মুদ্রাই সম্পদ।কারন সম্পদের হিসাব মুদ্রাতেই হয়।
- ৩। মুদ্রা কখনো সুদী পণ্য হয়না।
- ৪। ফরেক্স লিকিউডিটি প্রোভাইডরগন সুদ মুক্ত ট্রেডিং সুবিধা আপনাকে প্রস্তাব করছে।
অর্থাৎ ট্রেডিং মার্কেট হিসাবে শেয়ার মার্কেট বৈধতা পাওয়ার যে শর্তগুলো আমরা দেখলাম তা তুলনা মুলক ভাবে বিবেচনা করলে ফরেক্স মার্কেটে কোন ভাবেই প্রযোজ্য নয়। শেয়ার মার্কেটের মূল কন্সেপ্ট হচ্ছে কোম্পানী বা বস্তুর মালিকানা ক্রয়-বিক্রয়ে লাভবান হওয়া।যা সম্পূর্ন পাবলিক ডিমান্ড নির্ভর।ঠিক একই কন্সেপ্ট ফরেক্সের ক্ষেত্রেও।অর্থাৎ যেখানে কারেন্সি পেয়ারের শেয়ার কেনা বেচা হচ্ছে পাবলিক ডিমান্ডের উপর ভিত্তি করে।আর পাবলিক ডিমান্ড বহু কারনে হতে পারে। যেমন অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,আন্তর্জাতিক।স্বচ্ছতার বিচারে ফরেক্স ও স্টক মার্কেট দুইয়ের মাঝে উপলব্ধির অনেক কিছুই রয়েছে।প্রচলিত শেয়ার ব্যবসা যা ধোকাবাজি,ফটকাবাজী ও সুদের বেড়াজালে পেঁচানো সেখানে কারেন্সি ট্রেডিং স্বচ্ছতার বিচারে অবশ্যই এগিয়ে থাকবে।
প্রসঙ্গ মুদ্রার অস্তিত্ব,হস্তগত হওয়া, মার্জিন (লিভারেজ) ট্রেডিং
প্রসঙ্গঃ-০১ মুদ্রার অস্তিত্ব
ফরেক্স মার্কেটে মুদ্রার অস্তিত্ব বিদ্যমান আছে কিনা অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন।কেউ কেউ বলে থাকেন যে এখানে মুদ্রার কোন অস্তিত্বই নেই।আসলে তাদের এমন দাবি সম্পূর্ন অয়ৌক্তিক। কারন মুদ্রার অস্তিত্ব না থাকলে ট্রেডিংয়ের যৌক্তিকতা কোথায়। যদি আমি দাবি করি যে শেয়ার মার্কেটে অস্তিত্বহীন শেয়ারের কেনা-বেচা হয়।কোম্পানী শেয়ার কিংবা বস্তুর শেয়ার বলতে কিছুই নেই।তাহলে আপনি নির্বোধ ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাববেন না।চলুন আলোচনা করি কারেন্সির অস্তিত্ব নিয়ে।
প্রথমতঃ
আমাদের বুঝতে হবে যে ট্রেডগুলো কিভাবে নিষ্পত্তি হয়।সাধারনত আমরা যখন একাউন্ট ওপেন করি তখন আমাদের একাউন্টগুলো পরিচালিত হয় ব্রোকার হাউজের মূল একাউন্টের অধীনে।আর ব্রোকার হাউজের মূল একাউন্টটি যুক্ত থাকে নির্দিষ্ট কোন ব্যাংক বা লিকিউডিটি প্রোভাইডারের সাথে।অতপর ব্রোকারের ধরন অনুযায়ী ট্রেডগুলো মার্কেটে কার্যকর হয়। সুতরাং এসটিপি ব্রোকারের ক্ষেত্রে আপনার ট্রেডিং কমান্ডটি ব্রোকার তার লিকুইডিটি প্রোভাইডারের কাছে ট্রান্সফার করছে যে লিকিউডিটি প্রোভাইডার্ এসব মুদ্রা কেনা-বেচা করছে।যেমন ব্যাংক অব আমেরিকা ফরেক্স মার্কেটে বৃহত্তম একটি লিকিউডিটি প্রোভাইডার। সুতরাং আপনার প্রতিপক্ষ হিসাবে সে ট্রেডিং মার্কেটে বিদ্যমান।আপনি বাই করতে চাইলে সে সেল করছে আপনি সেল করতে চাইলে সে বাই করছে। সুতরাং যদি ফরেক্স মার্কেটে মুদ্রার অস্তিত্ব কে অস্বীকার করেন তাহলে কোন যুক্তিতে তারা আপনার সাথে কেনা-বেচাতে যুক্ত হবে ? তাছাড়া মুদ্রা উত্থান-পতন কে কেন্দ্র করে প্রফিট লসের এত আয়োজনই বা কেন ?
দ্বিতীয়তঃ
যদি ফরেক্স মার্কেটে মুদ্রার অস্তিত্বই না থাকতো তাহলে গ্লোবাল ট্রেডিং ভলিয়ম এ মার্কেট কে কোন ভাবেই প্রভাবিত করার কথা নয়। কারন এক্ষেত্রে ট্রেডারদের সাথে মার্কেটের কোন সম্পৃক্ততা থাকার কথা নয়। কিন্তু অসলেই বিষয়টি কি এমন ? মোটেও না। কারন একথা চির সত্য যে গ্লোবাল ট্রেডিং ভলিয়ম কারেন্সি মার্কেটের মুল চালিকা শক্তি। শেয়ার মার্কেটে যেমন ট্রেডারদের ব্যপক অংশগ্রহন মার্কেটে তারল্য সৃষ্টি করে। ঠিক অনূরুপ ভাবে কারেন্সি ট্রেডিংয়ে গ্লোবাল মার্কেট প্লেয়ারদের ট্রেডিং ভলিয়ম তারল্য সৃষ্টি করে।যাকে বলা হয় সাপ্লাই এন্ড ডিমান্ড। অতএব বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক ও মুদ্রা কেনা বেচা কারী প্রতিষ্ঠানগুলো যখন ফরেক্স মার্কেটে বিধ্যমান তখন কোন ভাবেই এখানে মুদ্রার অস্তিত্ব কে আপনি অস্বীকার করতে পারেন না।
প্রসঙ্গঃ-০২ হস্তগত হওয়া
বর্তমানে যারা ফরেক্স ট্রেডিং অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে মত দিচ্ছেন । তাদের অন্যতম একটি দাবি হচ্ছে এখানে লেনদেন হাতে-হাতে হচ্ছেনা।অর্থাৎ দুই পক্ষের কেউ টাকাটি হেন্ড টু হেন্ড ক্যাশ করছেনা। ফলে হাদিসে নবী(সঃ) এ হাতে-হাতে লেনদেনের যে প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন সেটি পাওয়া যাচ্ছেনা।কিন্তু আসলেই কি এ দাবি যৌক্তিক ?আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের জীবন ব্যবস্থা কে সহজ করে দিয়েছে। পূর্বেকার মানুষ স্বর্ন মুদ্রা,রৌপ্য মুদ্রার পুটলি নিয়ে দেশ বিদেশে সফর করতো ব্যবসার জন্য।কিন্তু আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এখন সে প্রথা আর নেই। কারন এখন আমদানী রপ্তানীতে অর্থ আদান প্রদান হয় একাউন্ট টু একাউন্ট ফান্ড ট্রান্সফারিংয়ের মাধ্যমে।যদি প্রচলিত শেয়ার মার্কেটের দিকে তাকায় তাহলে আমরা কি দেখতে পায় ?
আমরা সাধারনত দেখি যে শেয়ার কেনা-বেচার ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যকার লেনদেন হয় একাউন্ট টু একাউন্ট।যাকে বলা হয় ইন্টারনাল ট্রান্সফার।ঠিক একই প্রক্রিয়াই ফরেক্স মার্কেটেও লেনদেন হয়। অর্থাৎ লিকিউডিটি প্রোভাইডার এবং ট্রেডারদের মাঝে লেনদেনটি নিষ্পত্তি হয় ইন্টারনাল ট্রান্সফারিংয়ের মাধ্যমে।সুতরাং আপনি ট্রেডটি প্রফিটে সেল করেন আর লসে সেল করেন, সেটা ইন্টার্নাল ফান্ড ট্রান্সফারিংয়ের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হচ্ছে। আর হাদিসে বর্ণিত রুলসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মালিকানা সাভ্যস্ত হওয়া এবং যে কোন এক পক্ষের টাকা হস্তগত হওয়ার মাধ্যমে কারবারটি নিশ্চিত হওয়া।আর আধুনিক যোগে সেটি আমরা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে খুব সহজেই নিষ্পত্তি করতে পারি।সুতরাং হেন্ড টু হেন্ড লেনদেনর অর্থ ব্যাপক হতে পারে।
আমাদের একটি বিষয় বুঝা উচিৎ যে , আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদ কে হারাম করেছেন। আর সুদ বলতে বুঝানো হয়, যে ঋণ মূনাফা টানে। এটাই শরীয়তের মানদন্ড। শরীয়তের এ আইন দিয়ে যোগেযোগে উদ্ভাবিত সকল ব্যবসায়িক পদ্ধতিকে বিচার করা সম্ভব। অপর দিকে ব্যবসা শব্দটি ব্যপক। যেটি নির্দিষ্ট কোন পদ্ধতির ভিতর সীমাবদ্ধ নয়। মানব সভ্যতায় যোগাযোগে যত ধরনের কারবারের উদ্ভব ঘটবে যদি সেখানে সুদ, শর্ত যুক্ত ক্রয়-বিক্রয়, প্রতারনা ও হারাম বস্তুর অস্তিত্ব না থাকে তবে সেটি অবশ্যই বৈধতা পাবে।প্রচলিত শেয়ার ব্যবসা এবং ফরেক্স ট্রেডিং , দুইয়ের মাঝে প্রযুক্তিগত ছাড়া পদ্ধতিগত ভাবে কোন পার্থক্য নেই।আমাদের কে বুঝতে হবে যে ফরেক্স ব্রোকারগুলো গ্লোবাল মার্কেট প্লেসে কারেন্সি ট্রেডিংয়ে ট্রেডারদের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমরা ট্রেডারগন শুধুমাত্র পজিশন কমান্ড করি আর বাকি কাজ সম্পন্ন করে আমাদের প্রতিনিধি ব্রোকার হাউজ।
প্রসঙ্গঃ-০৩ মার্জিন বা লিভারেজ ট্রেডিং
লিভারেজ বা মার্জিন ট্রেডিং বলতে সাধারনত আমরা সুদ ভিত্তিক লোন কে বুঝে থাকি। যেমনটি আমরা শেয়ার মার্কেটে দেখতে পাই।কিন্তু আমাদের একটি বিষয় পরিস্কার বুঝা উচিত যে ফরেক্স মার্কেটের লিভারেজ আর স্টক এক্সেজেঞ্জের লিভারেজ কখনো এক নয়। কারন স্টক মার্কেটে মার্জিন বা লিভারেজ ট্রেডিং বলতে সুদ ভিত্তিক লোন কে বুঝিয়ে থাকে। কিন্তু ফরেক্স মার্কেটে লিভারেজ ট্রেডিংয়ে কোন সুদ যু্ক্ত নেই।এখানে লিভারেজ বলতে কোন প্রকার শর্ত ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয়ে বাড়তি সুবিধা প্রদানকেই বুঝানো হয়।
প্রতিটি মুসলিম ফরেক্স ট্রেডারের প্রতি আমার বক্ত্য
ফরেক্স বিষয়ে উপরোক্ত গবেষনাটি একান্তই আামার ব্যাক্তিগত যা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কারেন্সি ট্রেডিং অবৈধ হওয়ার কোন নির্ভরযোগ্য কারন খুঁজে পাইনি। ইসলামীক শরীয়াহ অনুযায়ী ব্যবসা শব্দটি ব্যাপক হলেও তার প্রক্রিয়াই সর্বদা চারটি বিষয় বিবেচ্য। যথা হারাম বস্তু, সুদ,প্রতারনা ও স্পষ্ট নোকসান। যদি উক্ত চারটি বিষয়ের কোন একটি বিদ্যমান থাকে তবে নিঃসন্দেহে সেটি অবৈধ। এর বাইরে যে কোন ব্যবসায়ীক পদ্ধতি যদি তা সরাসরি শরীয়াহ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক না হয় তবে নিঃসন্দেহে তা গ্রহন যোগ্য। উল্লেখ্য যে যদি কোন কারবারের বিষয়ে আপনি সন্দীহান হোন তবে তা পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।
নিম্মে একজন ফরেক্স ট্রেডারের জন্য কিছু নির্দেশনা প্রদান করলাম।আশা করি আমলে নেয়ার চেষ্টা করবেন।
- 01| আপনাকে সর্বপ্রথম একটি এসটিপি ব্রোকার নির্বাচন করতে হবে
- 02| আপনাকে অবশ্যই একটি সুদ মুক্ত ট্রেডিং একাউন্ট বেছে নিতে হবে।
- 03| আপনার ট্রেডিং শুধুমাত্র কারেন্সি পেয়ারে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
- 04| আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি সম্পূর্ন পুঁজি ঝুঁকিতে ফেলবেন না
- 05| উত্তেজনা মূলক ট্রেড পরিহার করে potential income এর জন্যে ট্রেড করতে হবে।
- 06| ব্যবসা কে কখনো গেইম না ভেবে বরং ব্যবসা হিসাবে নিতে হবে।
- 07| মার্কেট এনালাইসিস করে স্বাভাবিক গতিতে ট্রেড করতে হবে।
- 08| আপনাকে বিনিয়োগ অনুপাতে প্রফিট প্রত্যাশা করতে হবে।
- 09| আপনার ট্রেডিং ক্যারিয়ার যেন দৈনন্দিন জীবনে বিরূপ প্রভাব না ফেলে। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
- 10| ফরেক্স মার্কেটে আপনার সম্পূর্ন সঞ্চয় বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নোটঃ ফরেক্স মার্কেটে কেবল মুদ্রা ছাড়া বাকি কোন সিম্বলে ট্রেড শরীয়াহ সমর্থীত নয়।কারন লিকিউডিটি প্রোভাইডার এবং ইন্টার ব্যাংক কখনো ঐসব সিম্বলের ফিজিক্যাল এসেট ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত নয়।
বিঃদ্রঃ যদি আমার উপরোক্ত গবেষনার বিপরীতে শরয়ী কোন আইনের ধারা উপস্থাপন করতে পারেন তবে অবশ্যই তা ই-মেইল অথবা চ্যাট অপশন ব্যবহারের মাধ্যমে জানাবেন।কৃতজ্ঞ থাকবো।যদি আমার গবেষনা সঠিক হয় তবে আল্লাহ যেন প্রতিদান দান করেন। আর যদি ভুল হয় তবে যেন তিনি সঠিক বুঝ দান করেন।